প্রতিদিন কেনো কলা খাবেন

ফল ফ্রুটস এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহজলভ্য আর আর সস্তা যে ফল টি সেটা হচ্ছে কলা। বিদেশী দামি ফলের দিকে না ঝুকে কম দামি দেশি ফল গুলো খাওয়া বেশি উপকারী। দেশি ফল গুলোর মধ্যেও সবচেয়ে সহজলভ্য হল কলা। সারা বারো মাস এই কলা পাওয়া যায়। রাস্তায় বেরুলেই চা এর দোকান থেকে শুরু করে সব জায়গায় -ই দেখা মেলে কলার। রাস্তায় হাটতে হাটতে ক্ষুধা লাগছে দারিয়ে একটা কলা খেয়ে নিলেন।

সকালে নাস্তার টেবিলে অনেকেই কলা রাখছেন। শরীর সুস্থ রাখতে ছোট বড় সকলের ই প্রতিদিন কলা খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।

কলা অনেক গুণে সমৃদ্ধ। উচ্চমাত্রায় পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যক্ত থাকায় এটি একটি খুব-ই পুষ্টিকর খাবার। এর কঠিন খাদ্য উপাদান এবং সেই সাথে পানি জাতীয় উপাদান সমন্বয় যেকোনো তাজা ফলের তুলনায় বেশি।

প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমান কলার গুনাগুণঃ

পানিঃ ৭০.১%

আমিষঃ ১.২%

ফ্যাট (চর্বি); ০.২%

খনিজ লবনঃ ০.৮%

আশঃ ০.৪%

শর্করা ৭.২%

ক্যালসিয়াম ৮৫মিলিগ্রাম

ফসফরাস ৫০ মিলিগ্রাম

আয়রন ০.৬ মিলিগ্রাম

ভিটামিন -বি কমপ্লেক্সঃ৮ মিলিগ্রাম
এবং ভিটামিন সি ও রয়েছে কলায়।

কলা যখন অতিরিক্ত পেকে যায় তখন এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পরিমান বহুগুন বেড়ে যায়। শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুব গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করে। কলা শরীরের শক্তি যোগায় এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

আসুন জেনে নি-ই কলার বিস্তারিত গুনাগুনঃ

শরীরে শক্তি যোগায়ঃ

কলার মধ্যে রয়ে তিন ধরণের শক্তিশালী প্রাকৃতিক চিনির মিশ্রণ (ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ, এবং গ্লুকোজ )আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখে এবং আপনাকে যোগান দেয় দিনের প্রয়োজনীয় কর্মশক্তি। এই শক্তি শরীরে দৃঢ় শক্তির যোগান দেয়।

এই কারণে খেলোয়াড়দের প্রায়-ই খেলার আগে বা খেলা চলাকালীন কলা খেতে দেখা যায়।

কৌষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ

কলার মধ্যে ফাইবার কৌষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়তা করে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমানে আঁশ থাকায় পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ২টি করে কলা খেলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। হজম শক্তি বাড়াতেও কলার ভূমিকা অপরিসীম।

হৃদযন্ত্র ভালো রাখেঃ

পাকা কলা পটাসিয়ামের আধার। প্রতিদিন একটি বা দুটি কলা খেলে আমাদের হৃদযন্ত্র অনেক বেশি সচল থাকবে। হার্ট এটাক ও স্ট্রোকের ঝুকি কমাতেও কলার ভূমিকা ব্যাপক।

কিডনি সুস্থ রাখেঃ

কলার পটাশিয়াম কিডনি ভালো রাখতে সহায়তা করে। ইউরিনে ক্যালসিয়াম জমা হতে বাধা দেয় বলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এরফলে হাঁড় মজবুত হওয়ার জন্যও আরও বেশি ক্যালসিয়াম বরাদ্দ থাকে।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ

কলায় আছে প্রচুর পরিমাণে বিটামিন বি৬, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড সৃষ্টি করে, রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখে এবং হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ, শরীরে উৎকৃষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টির জন্য কলার জুড়ি মেলা ভার।

পাকস্থলীর আলসার ও বুক জ্বালা রোধ করেঃ

কলা প্রোটেক্টিভ মিউকাস লেয়ার বৃদ্ধির মাধ্যমে পাকস্থলিতে পিএইচ লেভেল ঠিক রাখে, যা আমাদের বুক-জ্বালা ও পাকস্থলীর আলসার থেকে রক্ষা করবে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ

কিছুদিন আগে গবেষনায় দেখা গিয়েছে , অতিরিক্ত পাকা কলা শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ TNF-A  নামক এক ধরণের যৌগ সরবরাহ করে, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ বাড়ায়।

এতে করে ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।

মানসিক চাপ কমায় ও ভালো ঘুমের সহায়কঃ

কলায় থাকে ট্রিপটোফেন নামক এক প্রকার অ্যামিনো অ্যাসিড যা সেরোটিন নামক হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই হরমোন ঘুমের জন্য সহায়ক। সেরোটোনিনের সঠিক মাত্রা আপনার মুড ঠিক রাখবে এবং মানসিক চাপ কমাবে।

ত্বক সজীব করেঃ

কলার চামড়ায় কিছু পরিমাণে ফ্যাটি উপাদান আছে, যা ত্বকে ঘষলে ময়েশ্চারাইজারের মতো উপকার পেতে পারেন।

আবার ব্রন দূর করার জন্যও কলার চামড়া ব্যবহার করা হয়। তবে সবধরনের ত্বকের জন্য তা কাজ নাও করতে পারে। তবু একবার চেষ্টা করে দেখতে তো দোষ নেই!

রক্তস্বল্পতা দূর করে

কলায় থাকা আয়রন রক্ত কোষকে উজ্জীবিত করে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে থাকে। যা রক্তস্বল্পতা দূর করে। এর ফলে অ্যানিমিয়ার সম্ভাবনা কমে। এমনকি অ্যানিমিয়া সারাতেও সাহায্য করে কলা।

পরিশ্রম ও ব্যায়ামে শক্তি যোগায়

একটু হেভি বা বড় ধরণের শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের জন্য শক্তি যোগায় কলা। এটি শরীরের পেশি, লিগামেন্ট ও রগ শক্তিশালী করে তোলে।

যেহেতু এটি শারীরিক পরিশ্রমে প্রচুর সহায়তা করে, তাই ব্যায়াম করার পূর্বে কলা খাওয়া অত্যন্ত উপকারী।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

অধিক ক্যালরি সম্পন্ন খাবারের বিকল্প হিসেবে কলা খাওয়া হলে তা দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।

মাঝারি আকৃতির একটি কলায় মাত্র ১০৫ ক্যালরি থাকে। এছাড়াও কলাতে রয়েছে ক্রোমিয়াম নামক খনিজ পদার্থ, যা বিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে।

ধূমপান ছাড়তে সহায়তা করেঃ

ধূমপান ছাড়তে চাইলে বেশি করে কলা খান। কারণ কলায় উপস্থিত ভিটামিন বি৬, বি১২, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম শরীর থেকে নিকোটিনের প্রভাব দূর করতে সাহায্য করে।

তাছাড়াও কলাতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালিশিয়াম থাকে যা শরীরের হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট।

এছাড়া যারা হাড়ের বা বাতের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের খাদ্যাভাসে কলা রাখতে পারেন।

কলায় প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকায় এটি মাথাব্যাথার প্রাকৃতিক নিরাময় হিসেবে কাজ করে।

দেখলেন তো কলায় কত ধরণের উপকার। আসুন প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কলা রাখি। রেগুলার কলা খাই নিজেও, বাচ্চা দের ও খাওয়াই।

আমার আজকের লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যদের পরতেও সহায়তা করবেন।

1 thought on “প্রতিদিন কেনো কলা খাবেন”

Leave a Comment

Item added to cart.
0 items - ৳ 0.00