শাড়ি যারা পছন্দ করেন তাদের পছন্দের একেবারে শীর্ষে বা খুব পছন্দের কয়েকটি ক্যাটাগরির একটা হচ্ছে মাস্ট জামদানি। এটি মুঘল আমল থেকে রবীন্দ্রনাথের সময় কালে যুগে যুগে ফ্যাশন প্রিয় নারীদের আর আভিজাত্যিক শ্রেনীর প্রধান শৌখিন একটি পোশাক।
সম্পুর্ন হাতে বোনা অসাধারণ শৈল্পিক নকশার দারুন একটি সৃষ্টি এই জামদানি।
মুসলিন এর পর যে অমুল্য পোশাক টি আমাদের ঐতিহ্য গত গর্ব সেটা এই জামদানি। একেক্টা জামদানির পিছনের যে শ্রম আর কস্টের গল্প সেগুলো অন্য সময় বলব। আজ শুধু বলব আপনি এই অনবদ্য সৃষ্টি টা কেন কিনবেন?
# প্রথমেই ধরে নিচ্ছি আমার লেখাটি যারা পরছেন তারা সবাই আমার মত শাড়ি পাগল। তো এটা তাহলে শিউর আমার ক্লোজেটে বা আলমারিতে প্রচুর শাড়ি ।
যদি এগুলোর মধ্যে হ্যান্ডলুম কোনো শাড়ি থেকে থাকে আপনি নিশ্চয়ই এতদিনে বুঝতে পারছেন আরামের দিক থেকেও হাতে তৈরি শাড়ির কোনো তুলনা নেই।
১)
জামদানি শাড়ি যারা বুনে খুব খেয়াল করে নকশা গুলো দেখবেন কি অপুর্ব সৃষ্টি , কোনো স্কেল বা ছাঁচ বা কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়াই শুধু মাত্র হাতে তৈরি এই অসাধারণ ফ্লোরাল বা জ্যামিতিক নকশা গুলো।
একেকজন কি নিখুত কারিগর!!! এরা সবাই খুব নিম্ন বিত্ত পরিবারের। আপনি জামদানি শাড়ী পরছেন মানে আপ্নি সেই শিল্পীদের কাজের মুল্যায়ন করছেন শুধু তাই ই নয় নিজেও নিজের শিল্প সত্ত্বার পরিচয় দিচ্ছেন।
২) আপনার ব্যাক্তিত্ব , রুচি এ সবই প্রকাশ পায় অনেকাংশে আপনার পোশাকের উপর। একজন মানুষের সুরুচির পরিচয় পাওয়া যায় তার পোশাক বাছাই এ।
সেক্ষেত্রে জামদানি একটি বিশাল রোল প্লে করে আসছে।
যেকোনো ইভেন্টে বা অনুষ্ঠানে এই একটি শাড়ি ই আপনাকে অন্যদের চেয়ে বহুকাংশে আলাদা করে দিবে।
৩) এটি অনেক গুলো পরিবার কে আজো বাচিয়ে রাখছে, আপনি জামদানি নিচ্ছেন মানে নিজের সৌন্দর্য আর ব্যাক্তিত্বের পাশাপাশি একেক্টা পরিবার কে সহযোগীতা করছেন।
৪) এতক্ষন তো বললাম রুচি বা শিল্পের কথা এবার বলি, এই জামদানি শাড়ী ১০০% হাতে বোণা বলে খুব ই পরিবেশ বান্ধব । তাই ত্বকের কোনো ক্ষতি করেনা।
রঙ থেকে সুতা … সুতা থেকে ম্যাকিং সবই ম্যানুয়াল বা হাতে তৈরি। ক্যামিকেল এর কোনো ছোয়া নেই।
তাই নিশিন্ত মনে এই শাড়ি আপনি যতক্ষন খুশি পরতে পারেন আরামসে।
.৫)
জামদানির প্রতিটি নকশা ই ইউনিক । পাড় থেকে জমিন বা আচল সব কিছুই ভীষন ইউনিক স্টাইল আর সুন্দর।
৬) সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশি বা এই ইন্ডিয়ান উপমহাদেশের মেয়েদের আসল সৌন্দর্য বা মুল পরিচয় আমাদের ঐতিহ্যের সাথে মেল বন্ধন।
আসলে জামদানি শাড়ি হল এমন একটা মাস্টার পিস এর প্রতিটা ইঞ্চি তে ভালবাসা আর হাতের সুনিপুন ছোয়া মনে হবে একজন শিল্পীর ক্যানভাস আপনি ধারন করে আছেন। আপনার বাজেট যদি ভালো থাকে আপনি ইন্ডিয়ান পাকিস্তানি ড্রেস বা শাড়ি না নিয়ে একটি জামদানি নিতে পারেন।
আপনার কাছে দাম হয়তো বেশি মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে এর দাম নির্ধারন করা খুব ই কঠিন হয়ে পরে। একেক্টা ভালো মানের শাড়ি বুন্তে ৩-৪ মাস সময় লাগে। প্রতি সপ্তাহে এদের মজুরি দিতে হয়। একবার মজুরিতে এক সপ্তাহের সাপ্তাহিক বাজার হয় একেকজনের।
আবার ভালো সুতার দাম ও বেশি পরে। একটা ভালো শাড়িতে যে পরিমান শ্রম আর সময় যায় সে শাড়ির সঠিক মুল্য না পেলে অনেকে বাধ্য হয়ে কম দামি বা নাইলনের নকল শাড়ি বুন্তে শুরু করে দেয়, কারণ অল্প সময়ে তারাতারি বিক্রি করে সে বাজার করবে সে হিসেব করে তারা।
আমি বা রুপকথা আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা তো করেই যাচ্ছি, তেমনি আপনাদের সহযোগীতা ও চাই।
আসল জামদানি কিনুন, শিল্প বাচিয়ে রাখি, নিজের সৌন্দর্য আর ব্যাক্তিত্ব আরো বেশি বাড়িয়ে তুলি, সাথে সাথে ত্বকের ও যত্ন করি। এই শাড়ি গুলো আমাদের স্কিনের জন্য ১০০% ভালো। উপরেই লিখেছি, আবারো বলছি এর ডাইং এ কোনো ক্যামিকেল ব্যাবহার করা হয়না। এর বুননেও কোনো ফ্যাক্টরির বা মিল কারখানার মেশিন ব্যাবহার করা হয়না, একেবারেই পরিবেশ বান্ধব সব।
ভালো থাকুন সবাই, সুস্থ আর সুন্দর থাকুন।