পোশাকে নিজের ব্যাক্তিত্ব যেমন প্রকাশ পায়, তেমনি প্রতিটা মানুষের রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটে এই পোশাকের মাধ্যমেই। কিছু কিছু কর্পোরেট অফিসে নির্দিষ্ট পোশাক বা ইউনিফরম থাক্লেও বেশিরভাগ অফিসেই ড্রেস কোড দেয়া থাকেনা। আর তখন ই অনেকেই কনফিউসড হয়ে যান কি ধরনের পোশাক পরবেন অফিসে।
তবে যে পোশাক ই পরা হোক না কেনো, তা যেন হয় সবসময় পরিপাটি সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।
অনেকেই এমন পোশাক পরে আসেন যা অফিসের ভাবমুর্তি ই নষ্ট হয়, আবার অনেকেই বুঝতে না পেরে খুব বেশি ক্যাজ্যুয়াল পরে চলে আসেন।
অফিসের পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজের ব্যাক্তিত্ত্বের সাথে মিল রেখে প্রতিষ্ঠানের ধরন, প্রচলিত সংস্কৃতি ও অবস্থান বুঝেই পোশাক সিলেক্ট করবেন।
অফিসে কিভাবে ক্যাজুয়াল থেকে পরিপাটি থাকবেন তার কিছু বিষয় নিয়ে আজ লিখবো।
অফিসে ছেলেদের পোশাক আর অনুষঙ্গ
প্রথমেই আসি ছেলেদের পোশাক পরিচ্ছদ নিয়ে…পুরুষ রা এক্ষেত্রে খুব বড় ঝামেলা থেকে বেচে যান ভাব্লেও এটা ভুল। অনেকেই ভাবেন ফুল হাতা শার্ট নরমাল প্যান্ট পরে টাক করে গেলেই হলো। আসলে ব্যাপারটা তা নয়। ছেলেদের ও পোশাক আশাক এ অনেক ট্রিকি আর মার্জিত সাথে ক্যাজুয়াল ভাব রাখতে হয়।
পরিপাটি মানেই সব সময় ফরমাল সং সেজে যেতে হবে তা নয়। বরং ইনফরমালি গুছানো যাতে দেখতে লাগে।
যে যে বিষয় গুলো মাথায় রাখবেন তা হলোঃ
১) ছেলেরা পোশাক নির্বাচনের সময় হাল্কা রঙের মার্জিত পোশাক বেঁছে নিন। কেননা খুব বেশি কড়া রঙের পোশাক অফিসে দৃষ্টিকটু দেখায়। যে পোশাকই পরুন না কেন তা যেন অফিসের সঙ্গে মানানসই ও শালীন হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন।
২) সাধারণত অফিসে ফরমাল শার্ট পরাই বেশি ভালো। তবে সব সময় ই শার্ট পরতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কেউ টি শার্ট পরে অফিসে আসতে চাইলে অবশ্যই কলার যুক্ত টি শার্ট পরুন। কেননা গোল গলার টি শার্ট অফিসে খুবই বেমানান দেখায়।
৩) অতিরিক্ত কাজ করা বা জবড়জং প্রিন্টের শার্ট না পরাই ভালো, এতে নিজের ব্যাক্তিত্ব ও নষ্ট হয়।
৪) ছেলেরা স্যান্ডেলের পরিবর্তে অফিসে স্যু পরে আসুন।
৫) অফিসের জন্য সবসময় ফরমাল প্যান্টই নির্বাচন করুন। খুব বেশি ভিন্ন ধরনের কাট ছাঁটের ইনফরমাল প্যান্ট পরে অফিসে না আসাই ভালো। বড়জোর প্লেইন জিন্স ও যায় কিছু শার্টের সাথে।
৬) অফিসে কড়া গন্ধের সুগন্ধির পরিবর্তে হালকা ঘ্রাণের রুচিশীল সুগন্ধি ব্যবহার করুন। এতে করে আপনার রুচিশীল মানসিকতার প্রতিফলন ঘটবে।
৭) রঙ এর ক্ষেত্রে হাল্কা রঙের পোশাক চুজ করতে পারেন, বা ব্ল্যাক, নেভিও বেশ যায়।
সাদা, হাল্কা হলুদ, স্কাই এই ধরনের মাইল্ড কালারের পোশাক বেঁছে নিন। এক কালার বা স্ট্রাইল ও রাখতে পারেন পছন্দের তালিকায়।
কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের পোশাক ও অনুষঙ্গ
অফিসের পোশাক হিসেবে এখন মেয়েরা পাশ্চাত্যের সঙ্গে সঙ্গে সালোয়ার কামিজ আর শাড়িও পরছে।
পাশ্চাত্যের পোশাকঃ
কর্পোরেট অফিস গুলোতে পশ্চিমা পোশাক এর ব্যাবহার আগের চেয়ে এখন অনেক বেড়েছে। এসব পোশাকের মধ্যে রয়েছে স্কার্ট, ফরমাল শার্ট, ফতুয়া, টপ, বিভিন্ন প্যান্ট, পালাজ্জো, ব্লেজার ইত্যাদি।
স্কার্টের মধ্যে সাধারণত এক রঙের স্কার্ট ই বেশি পরছে কর্পোরেট অফিসগুলোতে। এছাড়াও কালো, সাদা, বাদামি ও হালকা যেকোনো রঙের স্কার্ট পরতে পারেন। এক রঙের স্কার্ট পছন্দ না হলে একই রঙের মখমলের হালকা নকশা করা স্কার্ট ভালো লাগবে। স্কার্টের সঙ্গে ফরমাল শার্ট বেছে নিতে পারেন, যা টপ এর কাট দিয়ে হবে।
গলাবন্ধ এবং সামনে বোতাম দেওয়া টপ হলে বেশি ভালো লাগবে। আবার পাতলা কিছু ফরমাল টপস ও পাওয়া যায়। ফরমাল ও লম্বা শার্টে স্ট্রাইপ থাকতে পারে। মেয়েদের জন্য সেমিফিটিং ও সেমিন্যারো প্যান্ট পাওয়া যায়। প্যান্ট গুলো লিলেন বা গ্যাবার্ডিন এর হলে বেশি ভালো।
ইজিপশিয়ান সুতির হালকা মাইল্ড রঙের শার্ট, টপস ও কুর্তি বেশি আরামদায়ক।
পকেট দিয়ে কুর্তাও বেশ চলছে। অফিসের জন্য মেয়েরা এখন এমন পোশাকই চান, যাতে ফ্যাশন ও আরাম দুটোই পাওয়া যায়।
শাড়ি
অফিসে শাড়ি বেশ একটা ফরমাল লুক এনে দেয়। তবে সব ধরনের শাড়ি বা সব নকশার শাড়ি অফিসের পরিবেশের সঙ্গে মানান্সই নয়।
শাড়িতে রঙ এর ক্ষেত্রে কালো, ধুসর, ছাই, হাল্কা বেগুনী , গোলাপি বেশ ভালো লাগবে। যেহেতু এখন মোটামুটি গরম তাই সুতি ব্লক বা টাঙ্গাইল এর শারী বেশ ভালো লাগবে আরাম ও লাগবে।
আবার অফিসে কোনো প্রেজেন্টেশন থাকলে জামদানি বা খাদিও বেশ একটা ফরমাল পরিপাটি লাগবে।
শাড়িতে বাটিক, ব্লক বা হাতের কাজ ও ভালো লাগবে। কিন্তু অবশ্যই মোটা পাড় এর শাড়ি ভালো লাগবে না।
কি ধরনের কাপড় নেবেন আর কি রঙের হলে ভালো
স্কার্টের কাপড় সিনথেটিক এক কাটের হলে ভালো। আবার আরামের কথা চিন্তা করে ফরমাল সুতি স্কার্টও পরতে পারেন। প্যান্ট গ্যাবার্ডিন ও লিনেন হলেই ভালো হয়।
শার্ট ও টপ সুতি, জর্জেট, সেমি সুতি, সার্টিন কাপড়, লিনেন ইত্যাদি পরতে পারেন। আবার প্যান্ট বা স্কার্ট যদি একটু গাঢ় রঙের হয়, তবে শার্ট বা টপ হালকা পেস্ট , স্কাই গোলাপি বেছে নিতে পারেন।
শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজের রঙের ক্ষেত্রে হালকা আকাশি, পেস্ট, সাদা , কালো, ধূসর, বাদামি, গোলাপি রং ভালো লাগবে।
অন্যান্য সাজ আর চুল
অফিসে চুল খোলা রেখে হালকা কার্লি করে নিতে পারেন। আবার সামনের চুলটা একটু পাফি বা ফুলিয়েও নিতে পারেন। যদি কেউ চুল বাঁধতে চান, তবে তা স্মার্টলি বাঁধুন।
অন্যান্য অনুষঙ্গ ও জুতা
১) একটু ফরমাল পোশাক পরলে স্লিপার ভালো লাগেনা, তাই মাঝারি আকারের হিল পরতে পারেন।
২) হাতে পরতে পারেন ঘড়ি এবং কানে, গলায় হালকা ও ছোট আকারের দুল বা টপ ও চেইন ।
৩) কড়া পারফিউম এড়িয়ে চলুন। হাল্কা মিষ্টি ঘ্রানের সুগন্ধি ব্যাবহার করুন।
৪) অফিসে এমন জুতা পরুন যেটা হাটার সময় খুব বেশি শব্দ হয় না। নয়তো অফিসে নিজেকে বেমানান লাগবে।
৫) আওয়াজ হয় এমন কোনো অলংকার পরে মেয়েদের অফিসে আসা ঠিক নয়। কেননা অলংকারের শব্দে অন্যদের কাজের মনোযোগ নষ্ট হতে পারে।
৬) কখন ও অফিসে খুব বেশি সেজে যাবেন না। যেভাবে আপনাকে খুব কনফিডেণ্ট দেখায় সেভাবেই যান । খুব বেশি মেকআপ ও অনেক ঝকমকে জামাকাপড় অফিসের জন্য উপযুক্ত নয়।
আবার তার মানে এই নয় যে কোন রকম অফিসে চলে যাবেন।
আপনার যদি মনে হয় লেখাটি আপনার বা কারো উপকারে আসতে পারে তবে শেয়ার করতে ভুলবেন না