জন্মের পর পরই শিশুদের কিছু কিছু চর্মরোগ দেখা যায়। যা কি না খুব স্বাভাবিকভাবেই হয়ে থাকে অথবা অজ্ঞতার কারণেও এ জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি হয়। শিশুর ত্বকের সঠিক পরিচর্যা , সময় মত সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে অতি সহজেই এ জাতীয় জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

Prickly Heat বা ঘামাচিঃ
দিনের তাপমাত্রা বেশি হওয়া সত্ত্বেও আমাদের মা চাচিগণ নবজাতককে চারদিক থেকে বিভিন্ন গরম কাপড়ে জড়িয়ে রাখেন এবং এর ফলে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ঘামাচির সৃষ্টি হয়।
প্রথম পর্যায়ে যে জাতীয় ঘামাচির সৃষ্টি হয় তা দেখতে সাদা বা লাল রঙ বিশিষ্ট পানি পানি গোটা আকারে দেখা দেয়। এ জাতীয় ঘামাচির চেনার মুল্মন্ত্র হচ্ছে যে ঘামাচি কখনো লোমের গোড়ায় হয়না। ঘামাচিকে যদিও মনে হতে পারে সাধারণ ব্যাপার, কিন্তু এ থেকে অনেক জটিল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে যা সারানো একটু কঠিন ব্যাপার হয়ে যায়।
আবহাওয়া যদি খারাপ থাকে তবে জন্মের পর শিশুকে একটু খোলামেলা রাখা উচিত। ঘরের জানালা খোলা থাকা উচিত।
Erathema Toxicum Neonatorum বা মাসিপিসিঃ
গ্রামে মা চাচিরা বা অন্যান্য মুরুব্বিরা এ জাতীয় চর্মরোগ কে মাসিপিসি বলে থাকেন , এবং এটি নবজাতকের হয়েই থাকে বলে তাদের ধারণা। সত্যি ই এটি খুব সাধারণ ব্যাপার। জন্মের তিন থেকে চারদিনের দিন শিশুর শরীরে লাল লাল র্যাশ দেখা দেয়। এর সাথে জ্বর বা অসুস্থতার অন্য কোন উপসর্গ থাকেনা। দশদিনের দিন কোন ধরণের ওষুধ ছাড়াই এটি ভালো হয়ে যায়।

Diaper Rash বা ন্যাপকিন র্যাশঃ
ডায়াপার বা নতুন প্যান্ট না ধুয়ে পরলে নেক সময় নবজাতকের লাল লাল ভাব নিয়ে এলার্জির মত র্যাশ দেখা দিতে পারে। এ জাতীয় র্যাশ শরীরের যে সমস্ত স্থান কাপড়ের সংস্পর্শে আসে সেই জায়গায় হয়ে থাকে। অর্থাৎ উরুতে বা হিপ এ হবে।তবে উরুর ভাঁজ বা কুঁচকির ভাঁজ বা হিপ এর ভাঁজ এ হবেনা।
এরকম অবস্থায় সাময়ীক ভাবে প্যান্ট বা ডায়াপার না পরিয়ে খোলা বা পাতলে কাপড় পরাতে হবে, আর আক্রান্ত স্থানে ন্যাপি ক্রিম বা এন্টি র্যাশ ক্রিম বা ভেসলিন লাগাতে হবে। কিছুদিন ব্যাবহারেই উপকার পাওয়া যায়। একটি বিষয় এখত্রে বেশ জরুরী সেটা হচ্ছে দীর্ঘ সময় ন্যাপকিন বা ডায়াপার পরিয়ে রাখলে বা রাতের একটানা একটা ডায়াপারে এটি বেশি হয়। তাই প্রথমে যেকোনো ডায়াপার স্যুট করছে কি না লক্ষ্য রাখতে হবে এবং ৩-৪ ঘণ্টা পর পর ডায়াপার চেঞ্জ করতে হবে।
candidiasis বা ফাঙ্গাঃ
নবজাতকের মুখের ভিতর বিশেষ করে জিহ্বাতে দুধের সরের মত আস্তরন দেখা যায়। সুস্থ সবল শিশুর ক্ষেত্রে ও এ জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে।মা চাচিগণ এ জাতীয় সমস্যায় নরম কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতেন বা সরিষার তেল লাগিয়ে মুছে দিতেন। আমি আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি এগুলো কিছুই করতে হয়না ,এম্নিতেই ঠিক হয়ে যায়। খুব বেশি সমস্যা মনে হলে ডাক্তারের পরামর্শ মত অরাল কিছু ড্রপ বা মলম আছে দিলে ঠিক হয়ে যায়।
যে সব জায়গা সব সময় ভিজা থাকে যেমন কুচকি, পায়খানার রাস্তার আশপাশ, গলার ভাঁজ, সেসব জায়গাতেও ক্যান্ডিডা বা ফাঙ্গাস দিয়ে ইনফেকশন হতে পারে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানের চামড়া লাল লাল ভাব হয়ে যেতে পারেএবং এর উপর সাদা সাদা ছোপ দেখা দেয় এবং প্রচন্ড চুলকায়। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে আক্রান্ত স্থান কে অবশ্যই শুকনো রাখতে হবে।
Cradle Cap বা মাথায় খুশকির মতঃ
কোন কোন নবজাতকের মাথায় হলুদ অথবা বাদামী রঙের খোসা বা চামড়া পুরু হয়ে জমতে দেখা যায়। কখনো কখনো বাজে গন্ধ বের হয় এবং ত্যালতেলে ভাব দেখা দেয়। এটি ৬ মাস বয়সে নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়।সাময়ীকভাবে পরিষ্কারের জন্য অলিভওয়েল বা পিউর নারিকেল তেল মেখে সকালে গোসল করাতে পারেন।

Scabies বা পাঁচড়াঃ
চুলকানি ,খোস পাঁচড়া ছোয়াচে রোগ। নবজাতককে কোলে নেয়ার জন্য আত্ত্বীয়স্বজন সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। এর ভিতর একজনের যদি সামান্য খোস পাঁচড়াও থাকে তা অতি সহজেই নবজাতককে আক্রান্ত করে।
তাই নবজাতক কে যারা কোলে নেবে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
