চারিদিকে চলছে দারুন অস্থিরতা। করোনা ,কোভিড-১৯ এর কারণে আমরা আজ সবাই বাসায়।
বাসার সাহায্যকারী থেকে শুরু করে সবাই এখন ছুটিতে। তাই না চাইলেও সারাদিন ঘরের কাজ করতে করতে হাপিয়ে উঠছেন সবাই।
যারা হোম অফিস করছেন তাদের বেলায় আরো বেশি, বেশি চরম মাত্রায় খাটুনী হয়ে যাচ্ছে এই সময়ে। বাসায় বসে অফিসের কাজ ও করতে হচ্ছে, এদিকে পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও দেখতে হচ্ছে, আবার খালি পেটে তো আর কাজ সম্ভব না, খাবারের আয়োজন ও করতে হচ্ছে।
আর যদি বাসায় ছোট বাচ্চা কাচ্চা থাকে তাহলে তো কথাই নেই। তাদের তো বাইরে ঝর বৃষ্টি , তুফান বা ভাইরাস ,যা-ই ঘটুক তাদের আবদার রাখতেই হচ্ছে।

আমি আজ তাদের জন্যই শর্টকাটে যেসব তৈরি করে খাওয়া যায় আবার বোর ও হবেন না , এমন ৮টি আইটেম এর কথা শেয়ার করবো। যেটা আমি করছি।
ডালঃ
ডাল এর কথা শুনেই হয়তো বিরক্তি এসে যাচ্ছে, তাইনা? আমারো আসলে তা হত। আমার মনে হত মজা করে ডাল রান্না করা আসলে অনেক কষ্ট সাধ্য।
আসলে এমন পরিস্থিতিতে আমি চেষ্টা করি রেগুলার ডাল রাখতে। কারণ ডাল টা থাকলে অনেক সময় ঝোল সহ তরকারি রান্নার চিন্তা বাদ দিতে পারি।
আমি যা করিঃ
আমি ডাল বেশি করে নিয়ে সামান্য পানি(এক ইঞ্চি মত বা জাস্ট ডাল টা ডুবে থাকে এরকম) নিয়ে প্রেশার কুকারে একবারে চাপিয়ে দেই। এতে সামান্য তেল, হলুদ আর লবন ও দিয়ে দিই এক সাথে। ৫/৬ টা সিটি উঠলে নামিয়ে ২/৩ ভাগ করি। যে ভাগ তখুনি রাধতে হবে সেটাতে কখনো টমেটো , কখনো আলু, কখনো আম, কখনো লাউ বা পেপে যা খুশি দিয়ে, রশুনের বাগার দিয়ে রাখি। অন্য ভাগ গুলো বক্স এ ভরে ফ্রীজ এ রেখে দি-ই, জাস্ট খাওয়ার আগে নামিয়ে বাগার দিয়ে পরিবেশন করি।
সিদ্ধ দেবার সময় (আমি একটু অলস তো তাই একসাথে দিয়ে দেই) এক সাথে আলু ছিলে কেটে দিয়ে দিতে পারেন।
আলু ডাল খেতেও ভালো লাগে।
মাছঃ
বড় মাছ আমি কেটে কুটে আনাই বা অনেকেই কেটে বেঁছে বিক্রি করে তাদের কাছ থেকে নিয়ে রেখেছি।
আনার পর ভালো ভাবে ধুয়ে বড় ডিশে প্রতিটা পিস আলাদা আলাদা করে বিছিয়ে দিয়ে ডীপ ফ্রিজারে রেখে দি-ই।

৮/১০ ঘন্টা পর সব গুলো পিস এক সাথে একটা বক্স এ বা জীপ্ লক ব্যাগ এ বা পলিথিনে ভরে রাখি।
এভাবে রাখি, কারণ আমি যখন যে বেলায় রান্না করি তখন যে কয় পিস লাগবে সে কটা নিয়ে ভিজিয়ে রেখে বরফ ছেড়ে দিলে হলুদ, লবন, স্বাদে ম্যাজিক এর মশলা গুড়ো দিয়ে মেখে ভেজে নি-ই।
আমি বেশিরভাগ সময়-ই বাচ্চাদের ঘন ডাল আর মাছ ভাজি দিয়ে চালিয়ে দি-ই। নিজেদের বেলায় ও তাই করি মাঝে মাঝে ইচ্ছে হলে আলু ভর্তা বা বেগুন ভর্তা সাথে নি-ই।
তবে মাছ ভাজি আমার ৩০ দিনের মধ্যে ২৫ দিন ই থাকে। কারণ বাচ্চাদের বেশ পছন্দ ।
আলু ভর্তাঃ
এই এক জিনিস আমাকে কেও প্রতিদিন দিলেও আমি কখনো এক ঘেয়ে হবনা খেতে, আমার পার্টনার ও না। যে বেলা আলু ভর্তা করি সে বেলা বাচ্চাদের মরিচ ছাড়া ভর্তা আর ডাল দিয়ে চালিয়ে দেই। কখনো পেয়াজ মরিচ ভেজে নি-ই, কখনো কাঁচা ই মেখে ফেলি।

আবার মাঝে মাঝে বেশি ভালো মুডে থাকলে এক সাথে বেশি করে পেয়াজ কুচি করে নি-ই, তাতে আলু ভর্তার সাথে চাইলে ধনে পাতা ভর্তা, ডিম ভর্তা বা আগের রাতের থেকে যাওয়া ভাজি মাছ ও ভর্তা করে খেয়ে ফেলি।
ডিমঃ
এই এক জিনিস আমার ঘরে প্রচুর লাগে। কারণ আমি মারাত্ত্বক অলস , আর আমার বাচ্চাদের বাবাও রান্নায় ব কলম।
তাই কখনো কিছু করতে ইচ্ছে না হলেও যদি রান্না ঘরে যেতেই হয় তবে ডিম ভেজে ভাত খেয়ে নি-ই। ডিম সিদ্ধ ও চালিয়ে দেই নাস্তায় বা দুপুরে।
এমনকি আমার পার্টনারকে যদি কিছু করতে বলি এই এক জিনিস ই সে খুব সুচারুরুপে করে (!!)


যেকোনো নাস্তা, বা আইটেম এ আমার ডিম অপরিহার্য। মানে আমি যেসব জিনিস বানাই তাতে ডিম টা বেশ কাজে লাগে। ঘরে যদি কিছু না থাকে বা ফ্রিজ থেকে কিছু বের করতে মনে নেই, বা কিছুই নেই ফ্রীজ এ। তখন ডিম ভুনা বা ডিমের কোর্মা অথবা ডিম ভাজি -ই ভরসা।
বেগুনঃ
সব্জির মধ্যে এই একটা জিনিস আমার খুব পছন্দের , কারণ কাটা বাছার ঝামেলা কম। ভর্তা করলে পুড়তে দিয়ে ভুলে যাওয়া যায়। ভাজলে ছোলা শুদ্ধ চাক চাক করে কেটে হলুদ, লবন দই(যদি থাকে) , ধনে গুড়া , বা কিছুই না দিয়ে শুধু লবন আর স্বাদে ম্যাজিক এর মশ্লা দিয়ে মাখিয়ে ভুলে যায়। পরে খাবার সময় ভেজে নি-ই।

কম তেলে ভাজতে হলে আগে তেল ছাড়া চাক চাক করে কাটা বেগুন টা তাওয়ায় ভেজে নিতে পারেন, পরে সামান্য তেলেও ভাজা যায়। বা আগের রাতে বেগুন এর টুকরো গুলো মাখিয়ে ফ্রীজে রেখে দিন পরে তেল কম টানবে, আর ভাজার সময় সামান্য একটু চিনি ছিটিয়ে দিলেও তেল খুব কম লাগে। অল্প আঁচে ঢেকে দিয়ে ভাজলেও কম তেল লাগে।
মাঝে মাঝে বেগুন ভাজি, আর ডাল ই আমার মেন্যু থাকে সাদা ভাতের সাথে।
বেগুনের ভর্তাও করতে পারেন, সিদ্ধ করে বা পুড়িয়ে। আবার খুব ভালো লাগ্লে মানে ফুরফুরা মন থাকলে আচারি বেগুন বা বেগুনের মগজ ভুনাও করতে পারেন। এই দুই আইটেম আমার ভীষণ প্রিয়। প্রচুর পেয়াজ রসুন কাটতে হয় বলে কম করি।
আর বেগুনের মগজ ভুনা যেটা নাম দেয়া সেটাতে আসলে কোনো মগজ লাগেনা, সেই ভর্তা টা এতই মজার, খেতে মগজের মত লাগে বলে, বেগুনের মগজ ভুনা বলে। হা হা হা।
মাংস ভুনাঃ
মুরগি বা গরু যাই-ই রাধি না কেনো দুটোতেই বাটা বাটির ঝামেলায় আমি যাচ্ছিনা এখন। এমনকি এখন আমার ব্লেন্ডার ও নষ্ট । আমি মুরগীর পিস গুলো লবন,পেয়াজ, রসুন (ছেঁচে নি-ই ) , আদা কুচি, হলুদ, ধনে গুড়া , মিক্স মশ্লা (ইচ্ছে হলে দি-ই ইচ্ছে না হলে দি না) আর দই দিয়ে মাখিয়ে রেখে দি-ই ৩/৪ ঘন্টা। পরে মনে পড়লে সব একসাথে অল্প একটু তেল আর অল্প পানি দিয়ে কুকারে চাপিয়ে দেই।
৫/৬ টা সিটি উঠলে মাঝে মাঝে এর সাথে আলু ছিলে টুকরো করে দেই, বা মাঝে মাঝে মুরগীর সাথে যা খুশি দিয়ে (আলু বা লাউ) আবার ৩/৪ সিটি দিয়ে নামিয়ে নি-ই।
কুকারের ঝামেলায় না গেলে এক সাথে মাখিয়ে চুলায় ভালো করে কষিয়ে নি-ই। পরে অল্প পানি দিয়ে (ঝোল করতে ইচ্ছে হলে) আরো কিছুক্ষণ রাখি। মাঝে মাঝে নামানোর সময় টালা জিড়া গুলো আর পেয়াজ বেরেস্তা করে ফোড়নের মত করে দিয়ে নামিয়ে ফেলি।
গরুর মাংস ও একই প্রসেস এ করি।
মাংস এক বারে রেধে ২.৩ টা বক্স করে করে ফ্রিজে রেখে দেই। যখন খাই তখন বক্স টা নামিয়ে চুলায় বসিয়ে সাথে আলু বা কিছু দিয়ে কষিয়ে নি-ই।
খিচুড়িঃ
খিচুড়ি হল বিপদের সময়ের সবচেয়ে নির্ভরতার নাম। সেই হল লাইফেও এটা ব্যাচেলর জীবনের সঙ্গী ছিলো, এখনো মাঝে মাঝে। আমার পাকনা দুই বাচ্চা খুব অপছন্দ করে তাই বেশি একটা করা হয়না।
আসলে খিছুড়ি রান্না যতই ঝামেলাহীন মনে করা হয়, ততোটা না। যদি সবজি খিচুড়ি বা মাংস দিয়ে করা হয়, তবে তো আমার অনেক সময় লেগে যায় সবজি কাটতে কাটতে।

যদি ইচ্ছে হয় ঘরে অল্প অল্প সবজি আছে, সাথে কেটেকুটে দিতে পারেন, আলু সাথে না দিয়ে সব ধরণের সবজি দিয়ে পাতলা বা ভুনা ঝরঝরে খিচুড়ি করে, সাথে ডিম ভাজি, বা আচার,সালাদ, বেগুন ভাজি, ভর্তা যা খুশি একটা দিয়ে খেয়ে নেয়া যায়।
বেশি রাধতে ইচ্ছে হলে, মাংস ভুনা আর ভুনা খিচুড়ি, সাথে কাবাব টাবাব যা খুশি করেন, কিন্তু আজ লিখছি আমি রেগুলার কত কম সময় রান্না ঘরে কাটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি সে বিষয়ে।
খিচুড়ি বেশি করে করে বক্স করে রেখেও পরে গরম করে খেতে পারবেন।

ভাত ভাজিঃ
ছোটবেলায় বিরিয়ানি বলে বলে কত যে খেয়ে নিয়েছি এই জিনিস!!!
ভাত ভাজি হচ্ছে আমার সব সময়ের প্রিয় একটা আইটেম, এমনকি আমার পার্টনারের ও। আগের রাতের ভাত থেকে গেলে পেয়াজ কুচি, রসুন কুচি , আদা কুচি, ধনে, জিরা গুড়া, গরম মশ্লা (দিলে দি-ই না দিলেও হয়) ম্যাজিক মশলা দিয়ে ডিম দিয়ে বা লেফটভার মাংস দিয়ে , মাঝে মাঝে গাজর কুচি টুচি দিয়ে সেই ভাত টা ভেজে নি-ই।
এই ভাত ভাজির সাথে কিছু না হলেও চলে আমাদের। তবে আমি ডিম পোচ , আচার বা সালাদ দিয়ে চালিয়ে দেই।
** আমি লিখেছি যা, সব কিছুই আমার নিত্য দিনের ফাকিবাজি রান্না। কারণ আমার রান্না করতে খুব-ই বিরক্ত লাগে। আর শুধুই মনে হয় সময় নষ্ট । বা মাঝে মাঝে বাসন কোসন, হাড়ি পাতিল ধুতে ধুতে ্মনে হয় সারাটা দিন আমি রান্না ঘরে আটকেই গেলাম।
যারা খুব ভালো ভালো রান্না করছেন তাদের জন্য রইলো সন্মান, যারা ভীষন মজাদার বিভিন্ন আইটেম না হলে খেতে পারেন না তাদের জন্যও শ্রদ্ধা। তারা আমার এই লেখাটি অবজ্ঞা বা তাচ্ছিল্য করবেন স্বাভাবিক। আমি আসলে শেয়ার করেছি আমার নিজের অভিজ্ঞ্বতা রান্না নিয়ে।
আমার মত ২/১ একজন থাকতেও পারে, যাদের ইচ্ছে হয়না রাধতে আবার পেট বাচাতে যেতেই হচ্ছে রান্না ঘরে তাদের জন্যই আসলে এতক্ষন ধরে বসে বসে এই লেখাটি লিখলাম।
কারণ এখন চাইলেই ফুড পান্ডা বা উবার ইটস বা এরকম কাওকে অর্ডার করতে পারছিনা, বা রাধতে ইচ্ছে না হলেই ঠুসঠাস বাইরে গিয়ে খেয়ে আসতে পারছিনা। কাওকে বলতেও পারছি না এই এই জিনিস নিয়ে আসো বাচ্চাদের জন্য, আর আমার জন্য এই এই…
আবার কেও যদি খেতে না চায়, জোর দিয়ে বলতেও পারছিনা না খেতে চাইলে বাইরে থেকে খেয়ে আসো , আসার সময় নিয়েও আসো।
যাহোক, সবার কোয়ারেন্টাইন দিন গুলো ভালো যাক… আসুন রান্না নিয়ে বেশি ভাবনা চিন্তা না করি
ফাঁকিবাজি করে আমি কিভাবে কম সময়ে সকালের নাস্তা আর বিকেলের নাস্তা বানাই সেটা পরের লেখায় শেয়ার করবো।