সৌন্দর্যচর্চা ও স্বাস্থ্যরক্ষা

সৌন্দর্য বিকাশের সবচেয়ে বড় অন্তরায় হলো মেদ আর ভুড়ি। আপনার গায়ের রঙ কালো হোক বা সাদা, আপনি লম্বা হোন বা বেঁটে -আপনার যদি পরিমিত স্বাস্থ্য না থাকে তবে আপনাকে সুন্দর বলা যাবেনা।
আপনি দেখতে খুব সুন্দর, আপনার নাক উঁচু , পাতলা ঠোঁট , পান পাতার মত মুখের গঠন, হরিনের মত টানা চোখ এসব থাক্লেও যদি আপনার সেই সাথে একটি নাদুস নুদুস ভুঁড়ি থাকে তাহলেই সব শেষ। সৌন্দর্যের সেখানেই বলি দেয়া হবে। নিজেকে প্রকাশের কোনো মাধ্যমেই আপনার জন্য অবশিষ্ট থাকবে না। যদি শরীরে মেদ জমতে থাকে, তাহলে শরীর হয়ে যেতে থাকে থলথলে। চলাফেরা বা কাজেকর্মে কোনো প্রানবন্ত ভাব থাকেনা। নির্দিষ্ট কিছু পোশাক ছাড়া স ধরণের পোশাক পরা যায় না। ফলে পোশাকেও ব্যাতিক্রম আনা সম্ভব হয়না।

শরীরে ফ্যাট জমার কারণসমূহঃ

শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমার ফলে মানুষ মোটা হয় বা ভুঁড়ি হয়। ফ্যাট সেল বা চর্বি কোষ আয়তনে বাড়ে তখন শরীরে চর্বি জমে। পেটে, নিতম্বে, কোমরে ফ্যাট সেল বেশি থাকে।

অতিরিক্ত খাওয়ার জন্য দেহে চর্বি জমে। আবার যে পরিমান খাওয়া হচ্ছে বা দেহ যে পরিমান ক্যালরি পাচ্ছে সে পরিমান ক্যালরি ক্ষয় বা ক্যালরি খরচ হচ্ছেনা। এই কারনেও দেহে মেদ জমতে পারে। এগুলো কেনো হচ্ছে তা জানার পর অনেকে হয়তো বলবেন যে তারা যথেষ্ট সঠিক পরিমানে খাদ্য গ্রহনের পরেও ওজন বেশি।
তাদের অভিযোগ সঠিক। বংশগত কারনেও মানুষ মোটা হতে পারে। “ওব জিন ” নামের এক ধরণের জিন থাকে ফ্যাট সেলের মাঝে । এরা ল্যাপ্টিন নামের এক রকম হরমোন তৈরি করে। লেপ্টিন আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে দেহে জমে থাকা চর্বির পরিমান জানিয়ে দেয়। হাইপো থ্যালামাস নিউরোপেপটাইড অয়াই নামে এক রকম উৎসেচকের মাধ্যমে মস্তিষ্কের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রকে উত্তেজিত করে আমাদের ক্ষুধাকে নিয়ন্ত্রন করে।

জিনগত ত্রুটির কারণে যদি লেপ্টিন হরমোন কম থাকেতাহলে ক্ষুধা বেড়ে যায়। এর ফলেও দেহে মেদ বৃদ্ধি পায়। আবার যাদের দেহে ব্রাউন এডিপোজ টিস্যু বেশি থাকে তারা মোটা হয় না।

এছাড়া থায়রয়েড হরমোন মেদ কম বা বৃদ্ধির সাথে জড়িত, থায়রয়েড হরমোন বৃদ্ধি পেলে রোগী প্রচুর খাবে কিন্তু ওজন বাড়বেনা। আবার থায়রয়েড হরমোন কমে গেলে ওজন বৃদ্ধি পায়।

মদ্যপান, অতিরিক্ত ঘুম, মানসিক চাপ, স্টেরয়েড এবং অন্য নানা ধরণের ওষুধ গ্রহনের ফলেও ওজন বাড়তে পারে। বাড়তি ওজন কিংবা ভুঁড়ি নিয়ে অনেক সমস্যা । বাড়তি ওজনের জন্য যে কোনো ধরণের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । এছাড়া রক্তনালীতে চর্বি জমে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়।

বাড়তি ওজন রক্তচাপের ও কারণ।

  • ডায়বেটিস টাইপ টু দেখা দিতে পারে মেদ বৃদ্ধির জন্য।
  • মেদবহুল ব্যাক্তির জরায়ু ,প্রস্টেট এবং কোলন ক্যান্সারের সম্ভাবনা শতকরা পাঁচ ভাগ বেশি।
  • ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে হাটাচলা করতে সমস্যা হয়। হাঁটুর সন্ধিস্থল, কার্টিলেজ, লিগামেন্ট ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। আর্থারাইটিস, গেঁটে বাত এবং গাউট হবার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
  • অতিরিক্ত চর্বি থেকে পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
  • অতিরিক্ত ওজন ও ভুড়ির জন্য যৌনক্ষমতা কমে যেতে পারে। পুরুষের শুক্রানু কমে যেতে পারে এবং মহিলাদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব হতে পারে।
  • অতিরিক্ত ওজন ও ভুঁড়ির আসলে অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা । আবার দেখতেও যথেষ্ট দৃষ্টিকটু লাগে।কোনো পোশাকই ভালো দেখায় না। বয়সের তুলনায় বেশি বয়স্ক লাগে।

অতিরিক্ত ওজন ও ভুঁড়ি কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সঠিক ও পরিমিত মাত্রায় খাদ্য গ্রহন ও ব্যায়াম। কিন্তু দুইটাই অত্যন্ত কষ্টের সাথে নিয়মিত করতে হবে।

Leave a Comment

Item added to cart.
0 items - ৳ 0.00