বাড়তি মেদ ঝরানোর জন্য আমরা প্রতিনিয়ত কত কিছু করে যাচ্ছি। এই যেমন আমার পার্টনার, ইউটিউব থেকে শুরু করে নানান ব্লগ বা জিম, ডায়েটিশিয়ান ইত্যাদি আরো কত কি করে যাচ্ছে।
নেট ঘেটে বা নানান অভিজ্ঞ ,বিজ্ঞ দের পরামর্শ আমরা নিয়েই যায়, এর থেকে জন্ম নেয় বিভিন্ন রকম ভ্রান্তি মেদ ঝরানো নিয়ে।
ভালভাবে না জেনে বা অন্ধভাবে অনুসরন করে বিভিন্ন ভুল ভ্রান্তি করে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাই শরীরের মেদ ঝরানোর জন্য।

অবৈজ্ঞানিক কিছু মিথ আছে যেগুলো অন্ধ ভাবে বিশ্বাসের ফলে ওজন কমানোর চেয়ে বরং নিজের অজান্তেই নানান রোগ বাসা বাধছে শরীরে। আজকে সেগুলো আমি নিয়ে আমি শেয়ার করব কোনো ভুল তথ্যগুলো আমরা প্রায় সময় বিশ্বাস করি, এই মিথ বা ভুলে যাতে পা না দিতে হয় অন্যদের।
১)খাবার না খেয়ে ডায়েট করাঃ

- বর্তমানে অনেকেই খাবার না খেয়ে লিকুয়িড বা তরল খাবারের উপর উপর করে সারাদিন না খেয়ে ডায়েট করছেন, যা খুব ভয়াবহ।
- সলিড খাবার না খেলে বা সারাদিন ফাস্টিং এর ফলে শরীরের যে এঞ্জাইম প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট ভাঙ্গে তার ক্ষরণ কমে যায়। সাথে মেটাবলিক রেট ও স্লো হয়ে যায়। যার ফলে ভুড়ি বাড়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
- তাই ফাস্টিং বা উপোস না করে সারাদিনে তিনবার অল্প অল্প করে খাবার এর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- খাদ্যতালিকায় ব্রাউন রাইস বা সালাদের পরিমান বাড়ান।
২)ব্যায়ামকে অবহেলা করাঃ
- সঠিকভাবে ওজন কমাতে শুধু ডায়েট বা এক্সারসাইজ করলে হবেনা, ডায়েট এর সাথে সাথে এক্সারসাইজ ও করতে হবে।
- মোটামুটি ৭০% ডায়েট এবং ৩০% ব্যায়াম এর উপরই নির্ভর করে আমাদের ওজন কমানোর রেসাল্ট।
- ডায়েটে ক্যালরি নিয়ন্ত্রন করতে হবে, ব্যায়ামে ঘাম ঝরিয়ে তরতাজা থাকতে হবে। তাহলে শরীরে রক্তপ্রবাহ ঠিক রেখে রক্তচাপ সহ মানসিক চাপ আরো নানান রোগ বালাই দূরে সরিয়ে রাখবে।

৩)মাছ, মাংস,ডিম না খাওয়াঃ
আমাদের মধ্যে অনেকেই নিজে নিজে ডায়েট করে, আর বেশিভাগ সময়েই মাছ ,মাংস বা ডিম খেতে চান না। তাদের ধারণা এই ধরনের খাবারে ফ্যাট বেশি তাই শুধু সবজি , ভাত বা রুটি খেয়ে কাটিয়ে দেন পুরোটা দিন।

কিন্তু এই প্রোটিন বা আমিষ ইন্টেক কমিয়ে দিলে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া যায় না। তাই ডায়েট চার্ট এ অবশ্যই প্রোটিন , আমিষ রাখতে হবে, প্রয়োজনে ভাত বা রুটি বন্ধ করে।
৪)সব ধরনের ফ্যাট ই ক্ষতিকর নাঃ
- সব ফ্যাটই আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর না। ফ্যাট মানেই যে শরীরের ওজন বাড়িয়ে দিবে, এই ধারণা ঠিক না। কিছু পলি স্যাচুরেটেড ফ্যাট এর জন্য দায়ী।
- ভাজা পোড়ার যে কোলেস্টেরল যেমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা সিঙ্গারা সেগুলো কমিয়ে আনলে আমাদের শরীরে বাড়তি মেদ সহজে হবেনা।
- হৃদপিণ্ড বা মস্তিষ্কের জন্য ফ্যাট কিন্তু অনেক উপকারী একটা জিনিস। তাই একেবারে অগ্রাহ্য করলে চল্বেনা একে।
আমাদের জানতে হবে ভালো ফ্যাট আর খারাপ ফ্যাট কোন কোন খাবারে। - শারীরিক আবশ্যকীয় চাহিদা মেটাতে ফ্যাট কে বাদ দিলে চল্বেনা। অলিভ, মিষ্টি, এভোকাডো, ডার্ক চকলেট, বাদাম,মাখন, চীজ এগুলো খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। এগুলোতে ফ্যাট থাক্লেও ওজন বাড়বেনা।

৫)ওজন কমানোর সাপ্লিমেন্ট খাওয়াঃ
- আমরা অনেকেই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় কাটছাট করে ওজন কমানোর সাপ্লিমেন্ট এর উপর ভরসা করি বেশি। এতে করে আসলে আমার ধারণা নিজের পায়ে নিজেকেই কুড়োল মারা হয়।
- অয়ার্ক আউট এর সময় অনেকেই এনার্জি ড্রিংক খান বা বারে খেতে গেলেও সফট ড্রিংক খান, এতে করে মেদ আরো বাড়তে থাকে শরীরে।
- অনেকেই গটা ফল এর বদলে জ্যুস বা অন্যান্য সংস্করন খেতে দেখা যায়, এতে করে প্রিজারভেটিভ দেয়া আর কালার দেয়া খাবারে আমাদের আরো ক্ষতি হয়।
- ডাক্তারের পরামর্শ চারাই ওয়জন কমানোর পিল ও কিনে খান অনেকেই, এতে থাকে এমফিথেটামাইন যা সাময়িক ওজন কমালেও পরে আবার বাড়িয়ে দেয়। আর এতে করে আরো নানান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ও সম্মুখীন হতে হয়।

৬) লোভনীয় বিজ্ঞাপনের ফাঁদে আটকে পরাঃ
- ওজন কমান মাত্র ৭ দিনে/ বা ৩ দিনে , অমুক ক্রিম আপনার পেট এর মেদ ঝরিয়ে আপনাকে স্লিম করে তুলবে ইতায়দি এরকম অনেক লোভোনীয় বিজ্ঞাপনের ফাঁদে অনেকেই পা দেন।
- রাতারাতি পরিবর্তন ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়না। ওজন কমানো একটা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, এতে কোনো শর্টকাট নেই। আর ফাঁকি দিয়ে ত এই মহান কাজ হবেই না।
- ভালো হয় মাঝে মাঝে ডিটক্স ডায়েটিং করুন, সাথে এলকোহল ও প্রসেসড ফুড থেকে দূরে থাকুন। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন ই অর্ধেক সমস্যার সমাধান করে দেয়।
- অনেক সময় বিজ্ঞাপনে আগের ও পরের পরিবর্তন এর ছবি দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়। এই ফাঁদে কখনোই পা দিবেন না, এগুলো সব গুলোই ফটোশপ এর কাজ।
- সঠিক উপায়ে ওজন কমাতে ধৈর্য খুব জরুরি।
৭)অপর্যাপ্ত ঘুমঃ

- বেশি ঘুমালে ওজন বারে তাড়াতাড়ি একথার কোনো ভিত্তি নাই, বরং লেট নাইটে ঘুমাতে গেলেই মোটা হয়ে যাবার প্রবনতা বাড়ে।
- অনেকে মনে করেন বেশি রাত করে খেলে ওজন বেড়ে যায় একলাফে অনেকটাই কিন্তু এটিও ভ্রান্ত ধারণা।
- বেশি রাতে খাওয়া ও ঘুমের সাথে ওজন বাড়ার কোনো সম্পর্কই নেই।বরং ঘুমের ২ঘন্টা আগে খাবার খেয়ে নিলে তা চর্বির সঞ্চয় কমাতে অনেকটাই হেল্প করে ।
- রিলাক্স হয়ে বাঁচুন। চটজলদি কোনো চাপ নিয়ে ডায়েট বা ব্যায়াম করবেন না এতে শরীরের স্বাভাবিক যে প্রক্রিয়া তাতে মানাতে সমস্যা হবে।