প্রায় সব মেয়েদের ই শাড়ি পছন্দ, শাড়ি পছন্দ না এমন বাঙালি মেয়ে খুঁজে পাওয়া যাবেনা। শাড়িতেই অনিন্দ্য সুন্দর মেয়েরা। নিয়মিত ফরমাল ইনফরমাল শাড়ি ছাড়াও অনুষ্ঠান পার্বনের ও প্রচুর এক্সক্লুসিভ শাড়িতে আলমারি ভরা থাকে সবার।
শুধু তো শাড়ির কালেকশন বাড়ালেই হবেনা, দামি এই শাড়িগুলোর দরকার নিয়মিত যত্ন, ঠিকঠাক ভাবে যত্ন করলে আপনার দামি দামি এক্সক্লুসিভ শাড়িগুলো বছরের পর বছর একই রকম থাকবে।
একেক শাড়ির যত্ন একেক উপায়ে করতে হয়। সিল্ক এর এক ধরনের, শিফনের বা জর্জেটের আরেক ধরনের আবার জামদানির অন্য ধরনের।
তো চলুন জেনে নেয়া যাক কোন শাড়ির যত্ন কিভাবে করবেন।
সিল্কের শাড়ির যত্ন
সিল্কের শাড়ির আবেদন ই আলাদা। সিল্কের শাড়ি অনেক আভিজাত্যিক ও। এই আভিজাত্যিকতায় যেন কোনো দাগ ছোপ না পড়ে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত।
পদ্ধতিঃ
১) সিল্কের শাড়ি কখনোই লোহার হ্যাঙ্গারে ঝোলানো উচিত নয়, এতে কাপড়ে মরিচার দাগ পড়ে।
২) বাড়িতে না ধুয়ে ড্রাই অয়াশ করতে হবে।
৩)সিল্কের শাড়ি মাঝে মাঝেই ক্লোজেট থেকে বের করে বাতাসে ছায়ায় রাখা উচিত , এতে ফাঙ্গাস ধরেনা, বা স্যারস্যাতে হয়ে গন্ধ বেরুবে না।
৪)মাঝে মাঝে ভাজ পালটে সুতির কাপড়ে মুড়ে আলমারিতে গুছিয়ে রাখলেই ভালো থাকবে দীর্ঘদিন, শাড়ির ভাজে ভাজে ন্যাপথলিন দিয়ে রাখলে ভালো আরো।
সুতির শাড়ির যত্নঃ
সুতির শাড়ি সবচেয়ে সহজ ঠিক রাখা আর বেশ আরামদায়ক ও, কিন্তু মাড় চলে গেলে বেশ একটা ম্যাড়ম্যাড়ে ভাব এসে যায়। তাই শাড়ির কড়কড়ে ভাব বজায় রাখতে আর ফ্যাকাসে হয়ে এড়াতে কিছু ট্রিক্স করতেই হয়।
পদ্ধতিঃ
১) সুতির শাড়ি বাড়িতেই ধোয়া যায়। একটু ভিন্ন কিছু ঘোরোয়া উপাইয়ে ধুলে বেশ ভালো থাকে সুতির এক্সক্লুসিভ শাড়ি গুলো।
প্রথমবার যখন শাড়ি ধোবেন, তখন হাল্কা গরম পানিতে বিট লবন মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখবেন।
এতে শাড়ির রঙ টি পুরোপুরি পাকা থাকবে পরবর্তিতে বার বার ধোয়ার পরেও।
২) বাইরে থেকে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে বাড়িতে ফিরে যদি শাড়ি ধুতে ইচ্ছে না করে, তাহলে পানিতে অল্প রিঠা গুলে সেটাতে শাড়ি ভিজিয়ে রাখবেন। পড়ে পানি থেকে তুলেই মেলে দিন।ব্যাস!!
এতে শাড়ি অনেকদিন ফ্রেস আর দীর্ঘজীবি থাকবে।
৩)সুতির শাড়ি প্রতিবার ধোয়ার সময় হাল্কা মাড় বা এরারুট দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারলে বেশ ভালো।
ধোয়া শেষে যদি রোদে দিয়ে পরে আয়রণ করে ভাজ করে হ্যাঙ্গারে রাখতে পারেন আলমারিতে দীর্ঘদিন পর্যন্ত একই রকম থাকবে।
এমব্রয়ডারি বা জরি বা কারচুপি জারদৌসির কাজ করা জর্জেট বা সিল্কের শাড়ি
এই ধরনের শাড়ি সবার এক দুটা থাকে। এদের যত্ন একটু বিশেষ ভাবে করতে হয়।
১) এই ধরনের শাড়িতে যেহেতু জরি বা চুমকি পুতির কাজ বেশি থাকে, তাই এগুলো হ্যাঙ্গারে না ঝুলিয়ে মলমলের কাপরে মুড়িয়ে আলমারির তাকে ভাজ করে রাখতে হয়। বিশেষ করে এদের জরির বা ভারি কাজ গুলো যাতে মলমলে মুড়ানো থাকে।
২) ২-৩ মাস পর পর শাড়ির ভাজ খুলে নতুন করে ভাজ করা প্রয়োজন। না হলে জর্জেট বলুন বা সিল্ক দুটোর ই ছিঁড়ে যাবার আসংকা থাকে। মাথায় রাখতে হবে শাড়ির জরির পাড় বা কাজ করা অংশ ভাজের ভিতরে থাকে।
৩) এই ধরনের শাড়ি যদি আপনি বাসায় আয়রন করতে চান তবে শাড়ির উপর পাতলা কাপড় রেখে তবেই আয়রন করতে হবে।
জামদানি শাড়ির
সেই মোঘল আমল থেকে আধুনিক সময়ে এসেও জামদানি শাড়ির আলাদা কদর , এই শাড়ি যেমন ঐতিহ্যবাহী তেমনি আভিজাত্যিক ও। তাই যেন তেন ভাবে তো এই শাড়ি রাখা যায় না।
একটি মোটামুটি মানের ও অরিজিনাল জামদানি শাড়ির দাম পরে যায় ন্যুনতম দশ হাজার টাকা, তাই জামদানি শাড়ির আলাদা করে একটু বিশেষ যত্ন করতে হয়।
জামদানি শাড়ি ভাজ না করে, হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে বা রোল করে মুড়িয়ে রাখলেই ভালো। এই শাড়ি বাড়িতে অবশ্যই ধোবেন না। লন্ড্রিতে বা তাতিদের দিয়ে কাটা অয়াশ করে নিতে হবে।
কাতান ,বেনারসি
যারা শাড়ি পছন্দ করেন বা রেগুলার পরে থাকেন তাদের ও একটা বা দুটো কাতান বা বেনারসি শাড়ি থাকে ক্লোজেট এ। কাতান হয়তো মাঝে মধ্যে পরা হয়, কিন্তু বেনারসি শাড়ি তো তেমন একটা পরা হয়না। বছরে ১/২ বার শাড়িগুলো বের করে হাল্কা রোদে কয়েকঘন্টা রেখে ভাজ করে হ্যাঙ্গারে রেখে দিন। এই শাড়িগুলো বাড়িতে না ধুয়ে লন্ডড়িতে ড্রাই অয়াশ করে নিন।